বাজারে আসছে শীতের সবজি মূল্য সেই আকাশ ছোঁয়াই
বাজারে শীতের সবজি আসতে শুরু করেছে। কিন্তু মূল্য সেই আকাশ ছোঁয়া। ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ বিভিন্ন শীতের সবজি নিন্ম আয়ের নগরবাসীর পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। ছোট একটি ফুলকপি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা ও ছোট্ট লাউ ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
নতুন পেঁয়াজ আসার আগেই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম কমেছে প্রায় ২০ টাকা। এছাড়া সরবরাহ বাড়ায় প্রায় সব ধরনের সবজির দাম আগের মতোই। এদিকে কাঁচামরিচে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৪০ টাকা কমে গতকাল বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে।
গতকাল রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, কাওরানবাজার এবং খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, শীতের আগাম সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ, ঝিঙা, পটোল, করলা, ঢেঁড়স, ধুন্দল, চিচিংগা, বেগুন এখন বাজারে ভরপুর। এছাড়া লালশাক, ডাঁটাশাক, পাটশাক, মুলাশাক, পুঁইশাক, লাউশাকের কমতি নেই বাজারে। সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে পালংশাক ও নতুন আলু।
তবে নতুন আলু ও পালংশাকের দাম বাড়তি। প্রতি কেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। আর পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা আঁটি দরে।
গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কমার দিকে থেকে সবার ওপরে রয়েছে শিম। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিটির দাম কেজিতে কমেছে প্রায় ৪০ টাকা। বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি।
এদিকে হঠাৎ করে দাম বেড়ে ৯০ টাকা ছুঁয়ে ফেলা দেশি পেঁয়াজের দাম কমে ৬০ থেকে ৭৫ টাকায় নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও। প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি।
এদিকে হঠাৎ করে দাম বেড়ে ৯০ টাকা ছুঁয়ে ফেলা দেশি পেঁয়াজের দাম কমে ৬০ থেকে ৭৫ টাকায় নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও। প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি।
শান্তিনগর বাজারের ব্যবসায়ী মো. বিপুল হোসেন বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন পর বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসবে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার প্রক্রিয়াধীন থাকায় অনেক ব্যবসায়ী মজুদ করা পেঁয়াজ বাজারে ছেড়ে দিচ্ছেন। যে কারণে দাম কিছুটা কমে গেছে। গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকারও বেশি কমেছে।
বাজারে এই দামের সঙ্গে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকা পর্যালোচনা করে কিছুটা পার্থক্য দেখা গেছে। টিসিবির মূল্য তালিকায় দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০-৮০ টাকা এবং আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকা দেখা গেছে। ব্রয়লার মুরগি ১২০-১৩০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৩৫০-৩৮০ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় বেশিরভাগ সবজির দাম কমেছে। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ১০০ টাকায় কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। গাজরের দাম কমে ৮৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি।
শীতের আগাম সবজি ফুলকপির দাম ৫ টাকার মতো কমে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। তবে কিছুটা বেড়েছে বাঁধাকপির দাম। গত সপ্তাহে ১৫ থেকে ২০ টাকা পিচ বিক্রি হওয়া বাঁধাকপির দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
এদিকে গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পটোলের দাম কমে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। করলার দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ঝিঙ্গে, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, ধুন্দলের রয়েছে একই দামে।
এদিকে গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পটোলের দাম কমে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। করলার দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ঝিঙ্গে, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, ধুন্দলের রয়েছে একই দামে।
তবে বেগুনের দাম কিছুটা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া লাউয়ের দাম একই রয়েছে। কাঁচামরিচও আগের মতোই ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আগের সপ্তাহের মতোই লালশাক ও সবুজ শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। পুঁইশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে। তবে ১০ টাকা আটি দরে বিক্রি হওয়া মুলাশাকের দাম বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা। আর লাউশাকের দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরেই রয়েছে।
শান্তিনগর বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. আলম জানান, সাদা ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহের মতোই ১২০ থেকে ১২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার মুরগি ১৭০-১৭৫, পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট দেশি মুরগির দাম আগের বাড়তি দামে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা দরে।
গরুর মাংস ৫০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম কিছুটা কমলেও মাছের দাম রয়েছে বেশ চড়া। চাষের কই, সিলভার কার্প ও পাঙ্গাস ছাড়া কোনো মাছ ২০০ টাকা কেজি দরের নিচে মিলছে না। রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা কেজিতে। ছোট নলা মাছের দাম ২০০ থেকে ২২০ টাকা, কাচকি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, চাষের কই ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, ছোট সিলভার কার্প ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে সপ্তাহের ব্যবধানে আদার দাম কিছুটা বাড়লেও আগের দামেই স্থিতিশীল রয়েছে অধিকাংশ মুদি পণ্যের দাম। গতকাল বাজারে কেজিপ্রতি চীনা আদা ১৪০ টাকা এবং কেরালা আদা ১৫০, ছোলা ৯০, দেশি মুগ ডাল ১৩০, ভারতীয় মুগ ডাল ১২০, মাষকলাই ১৩৫, দেশি মসুর ডাল ১২৫, ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মসলার মধ্যে কেজি প্রতি দারুচিনি ৩৬০, জিরা ৪৫০, শুকনা মরিচ ২০০, লবঙ্গ ১৫০০, এলাচ ১৬০০ এবং হলুদ ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কেজিপ্রতি দেশি রসুন ১১০, ভারতীয় রসুন ৯০, আলু কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকা দরে।
ভোজ্যতেলের দাম আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বাজারে ব্র্যান্ডভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫৩০-৫৪০, প্রতি লিটার বোতল ১-২ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্যতেলের দাম আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বাজারে ব্র্যান্ডভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫৩০-৫৪০, প্রতি লিটার বোতল ১-২ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কমেনি চালের দামও। গতকাল বাজারে মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪৪ টাকা, পারিজা চাল ৪৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মিনিকেট (ভালো মানের) ৫৮-৬০ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫৬-৫৮ টাকা, আমদানি করা ভারতীয় বিআর-২৮ ৪৮ টাকা, দেশি বিআর-২৮ ৫২ টাকা, নাজিরশাইল (কাটারি) ৬৩ টাকা, নাজিরশাইল (নরমাল) ৬৫ টাকা, পাইজাম চাল ৪৮ টাকা, বাসমতি ৫৩ টাকা এবং পোলাও চাল ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. মাসুম বলেন, বাজারে শাক-সবজি ভরপুর থাকায় দাম কিছুটা কমেছে। সামনে বৃষ্টি না হলে দাম আরও কমবে। তবে এখন বাজারে যে হারে সবজির সরবরাহ রয়েছে, দাম সেই হারে কমেনি।
No comments